রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

ধ্বনি ও ধ্বনির শ্রেণীবিভাগ(ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণীবিভাগ)

ধ্বনি ধ্বনির শ্রেণীবিভাগ(ব্যঞ্জন ধ্বনির শ্রেণীবিভাগ)


ধ্বনির সংজ্ঞা: বাগ্ যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত
ভাষার ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ একক হল  ধ্বনি।
যেমন--অ,আ,ক,খ........ইত্যাদি।
ধ্বনির লিখিত রূপকে বলা হয় বর্ণ।
ধ্বনি হলো কানে শোনার বিষয় আর বর্ণ হলো যে ধ্বনি আমরা শুনছি তার লিখিত রূপ।
ধ্বনির শ্রেণীবিভাগ: ধ্বনিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়  স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।


)স্বরধ্বনি: যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বাসবায়ু বাগ্ যন্ত্রের বিশেষ কোথাও বাধা পায়না এবং উচ্চারণের সময় অন্য কোনো ধ্বনির সাহায্যের প্রয়োজন হয়না তাদেরকে বলা হয় স্বরধ্বনি।
যেমন--অ,ই,উ...ইত্যাদি।
স্বরধ্বনি কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়----
মৌলিক স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি গুলিকে বিশ্লেষণ বা ভাঙা যায়না তাদেরকে বলা হয় মৌলিক স্বরধ্বনি।যেমন--অ,আ,ই,উ,এ,অ্যা,ও।
যৌগিক স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি গুলিকে বিশ্লেষণ করা যায় বা ভাঙা যায় তাদেরকে বলা হয় যৌগিক স্বরধ্বনি।যেমন--ঐ,ঔ।
)ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বাসবায়ু মুখবিবরের কোথাও না  কোথাও  সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে বাধা পায় এবং যে ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া  উচ্চারিত হতে পারেনা তাদেরকে বলা হয় ব্যঞ্জনধ্বনি।
যেমন--ক,খ,গ,ঘ,ঙ । 
ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণীবিভাগ:
)উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণীবিভাগ:

# কন্ঠ‍্য ব্যঞ্জনধ্বনি: এই ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বার পিছনের অংশ আলজিহ্বার গোড়ার নরম বা কোমল তালু স্পর্শ করে স্বাসবায়ুতে আংশিক বাধা দেয়।এর ওপর নাম স্নিগ্ধ তালব‍্য ধ্বনি।
উদা: ক,খ,গ,ঘ,ঙ। ক বর্গের ধ্বনি গুলি।
# তালব‍্য ব্যঞ্জনধ্বনি: এই ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা কঠিন বা শক্ত তালুকে স্পর্শ করে স্বাসবায়ুকে আংশিক ভাবে বাধা দেয়।
উদা: চ,ছ,জ,ঝ,ঞ,শ।
# মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি: এই ব্যঞ্জনধ্বনি  উচ্চারণের সময় জিহ্বার সম্মুখ অংশ উল্টে গিয়ে শক্ত তালুর পিছনের অংশ বা মূর্ধাকে আঘাত করে।
উদা: ট,ঠ,ড,ঢ,ণ,ড়,ঢ়।
# দন্ত্য ব্যঞ্জনধ্বনি : এই ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা দাঁতের গোড়ায় স্পর্শ করে।
উদা: ত,থ,দ,ধ,ন,স।
# ওষ্ঠ‍্য ব্যঞ্জনধ্বনি: এই ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় ওষ্ঠ‍্য এবং অধর পরস্পর স্পর্শ করে।
উদা: প,ফ,ব,ভ,ম।
# দন্ত্যমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি: এই ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভের ডগা দন্ত্যমূল স্পশ করে।
উদা: র,ল,ন।
# কণ্ঠ‍্যনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনি: স্বরতন্ত্রী দুটি পরস্পরের দিকে এগিয়ে এসে তাদের মধ্যবর্তী স্বাসবায়ুর পথ সংকুচিত বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে এই ধ্বনির সৃষ্টি করে।
উদা: হ
) উচ্চারণ প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির 

শ্রেণীবিভাগ:

# ঘোষধ্বনি: যে ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের সময় আমরা সেই ধ্বনির সাথে স্বরতন্ত্রীর কম্পনজাত সুর বা ঘোষ মিশিয়ে উচ্চারণ করি তাকে বলে ঘোষ বা ঘোষবৎ ব্যঞ্জন ধ্বনি।
উদা: গ,ঘ,জ,ঝ,ড,ঢ,দ,ধ,ব,ভ,র,ড়,ঢ়,হ।
# অঘোষধ্বনি: যে ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের সেসময় আমরা স্বরতন্ত্রীর কম্পনজাত সুর বা ঘোষ মিশিয়ে উচ্চারণ করিনা।
উদা: ক,খ,চ,ছ,ট,ঠ,ত,থ,প,ফ।
# অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি: শ্বাসবায়ু কে আমরা বলি প্রাণ।যে ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু বা প্রাণ অপেক্ষাকৃত কম পরিমানে নির্গত হয় তাকে অলপপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি বলা হয়।
উদা: ক,গ,চ,জ,ট,ড,ত,দ,প,ব।
# মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু বা প্রাণ বেশি পরিমাণে নির্গত হয় ,তাকে বিলে মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি।
উদা: খ,ছ,ঠ,থ,ফ।
# স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু মুখবিবরের কোথাও না কোথাও বাধা পায় এবং জিহ্বা বিভিন্ন উচ্চারণ স্থানকে স্পর্শ করে।
উদা: ক থেকে ম পর্যন্ত প্রতিটি ব্যঞ্জনধ্বনিই স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি।
# ঘৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখবিবরে ঘর্ষণের মতো ধ্বনি সৃষ্টি হয় সেগুলি ঘৃষ্ট ব্যঞ্জন ধ্বনি।
উদা: চ,ছ,জ,ঝ।
# নাসিক‍্য ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু নাসারন্ধ্রের মধ্যে দিয়ে  প্রবাহিত হয়।
উদা:ঙ,ঞ,ণ,ন,ম ।
# উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় শিস্ জাতীয় ধ্বনি ওই ধ্বনির সঙ্গে মিশে যায় তাকে উষ্ম ধ্বনি বলে।
উদা: শ,ষ,স,হ ।
# কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বার সামনের অংশ কম্পিত হয়ে দাঁতের গোড়া বা দন্তমূল স্পর্শ করে।
উদা: র।
# পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বার দুপাশ দিয়ে ধবনিবাহী বাতাস নির্গত হয়।
উদা: ল
# তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি: শ্বাসবায়ুর গতিপথে জিহ্বার সামনের অংশ যদি তালুতে একবার মাত্র টোকা দিয়ে ছোঁয়  এবং শ্বাসবায়ু তাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিতে চায় তবে এই ধ্বনির সৃষ্টি হয়।
উদা: ড়,ঢ় ।
# নৈকট‍্য ব্যঞ্জনধ্বনি: শ্বাসবায়ুর গতি পথে বাঁধা যদি এত কম হয় যে ,কোনো ঘর্ষণধ্বনি শোনা যায়না অথচ মনে হয় বাধার ভাবটি রয়েছে,তবে তাকে বলে নৈকট্য ব্যঞ্জনধ্বনি।
উদা: য় ।


  


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন