বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ

##ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ:##

ভাষার ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ একক ধ্বনি। আজ আমরা এই ধ্বনি পরিবর্তন সম্পর্কে জানব।পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান এবং সেইসব স্থানের মানুষের ভাবপ্রকাশের ভাষা ও ভিন্ন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাভাবনা যেমন পাল্টায়,তেমন ভাষারও পরিবর্তন হয় এটাই স্বাভাবিক।এখন প্রশ্ন হলো কেন হয় ?
ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল.............

) বাকযন্ত্রের ত্রুটিজনিত কারণ:
       বাগ যন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাই বাগযন্ত্রের যদি কোনরকম ত্রুটি থাকে তবে ধনী স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হতে পারেনা, সেক্ষেত্রে একজন যা বলে শুনতে অন্যরকম লাগে, এক্ষেত্রে ধ্বনির মূল রূপ অনেকখানি বদলে যায়।


) শ্রবণ যন্ত্রের ত্রুটিজনিত কারণ :
      অনেক সময় কানে শুনতে যদি অসুবিধা হয় বা কম শোনা হয় তাহলে একজন যা বলে সেটাকে আমরা অন্যরকমভাবে শুনি,যার ফলে ধনী বিকৃতি বা ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে।
) অনুকরণ এর অক্ষমতা জনিত কারণ:
      অনেক সময় অল্প শিক্ষিত মানুষ কঠিন বিদেশি শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না,সেটিকে অন্যরকম ভাবে উচ্চারণ করে,ফলে ধ্বনির পরিবর্তন দেখা যায়।
উদা: স্টেবল-আস্তাবল ।
) শ্বাসাঘাত জনিত কারণ:
      উচ্চারণ করার সময় কোন ধ্বনির উপর বেশি জোর দেওয়া হয় কোন ধ্বনির উপর অল্প জোর দেওয়া হয়,সে ক্ষেত্রে কোন ধ্বনির উপর বেশি জোর দেওয়া হলে দেখা যায় মূল ধ্বনি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কিংবা অন্য কোন ধ্বনির আগমন সেই শব্দের মধ্যে চলে এসেছে। ক-খ-গ খুব দ্রুত উচ্চারণ করে ফেলে যার জন্য কিছুটা ভিন্ন রূপ ধারণ করে,আবার অনেক সময় খুব শিথিলভাবে উচ্চারণ করি সে ক্ষেত্রে ধ্বনির রূপ পাল্টে যেতে পারে।
উদা: গমোছা-গামছা ।
) সহজ করে উচ্চারণ করার প্রবণতা জনিত কারণে:
        অনেক সময় আমরা চেষ্টা করি কম কষ্ট করে উচ্চারণ করার, যার ফলে ধ্বনি মূল শব্দ থেকে কিছুটা পাল্টে যায়।
  যেমন-জন্মেও দেখিনি ,জম্মেও দেখিনি।
) আবেগজনিত কারণ:
আবেগের বশে আমরা ভিন্ন রকম উচ্চারণ করি, সে ক্ষেত্রে মূলধনী থেকে কিছুটা পাল্টে যায়। উদা: কাকা-কাকু ।
  ) ছন্দের মিল তৈরি করার জন্য:
যারা সাহিত্য রচনা করে তারা কাব্যকে আরো সুন্দর করে তোলার জন্য  ছন্দের মিল তৈরি করার জন্য ধ্বনির মিল রাখার চেষ্টা করে।এর জন্য ধ্বনি মূলধ্বনি থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
যেমন- রত্ন,রতন। যত্ন করে রাখিও, যতন করিয়া রাখিও।
) আঞ্চলিক প্রভাব:
       আঞ্চলিক প্রভাবের জন্য ধ্বনির রূপান্তর ঘটে।এক এক অঞ্চলের উচ্চারন প্রকৃতি এক এক রকম।তাই অঞ্চলভেদে মূল ধ্বনি বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হতে থাকে সেইসমস্ত জায়গার অধিবাসীদের দ্বারা।
উদা: স কে চ বলা হয়।গাড়ি কে গারি ।
) ভৌগোলিক অবস্থান জনিত কারণ:                    ভৌগোলিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য ধ্বনির পরিবর্তন হতে পারে।সমুদ্রে বসবাসকারী মানুষের উচ্চারণ আর পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের উচ্চারণ ভিন্ন রকমের হয়। নদীমাতৃক দেশের অধিবাসীদের উচ্চারণ অন্যরকম হয়।এই কারণেই যেখানকার ভূপ্রকৃতি কঠিন সেখানকার ভাষা বেশি কঠিন হয়। যেখানে ভূপ্রকৃতি কোমল সেখানকার ভাষা মাধুর্যপূর্ণ হয়।
উদা: জার্মান ভাষা কর্কশ কিন্তু স্পেনীয় ভাষা মধুর।
) লিপি বিভ্রাট জনিত কারণ:
       ভাষার শব্দ লিখতে গিয়ে অনেক সময় শব্দটিকে কাছাকাছি উচ্চারণে লিখি সময়ের অভাবে,বা অনেক সময় ভুল করেও অন্যরকম লেখা হয়ে যায়,এর ফলে ধ্বনির পরিবর্তন হয়।
) আলস্য জনিত কারণ:
     অনেক সময় মনে হয় যে শব্দটি আমি বলতে যাবো সেটি অতটা বড় করে না বলে যদি ছোট করে বলি তাহলে কম সময় লাগবে এবং কষ্ট ও কম হবে।বা খুব জোর দিয়ে যেটা বলতে হয় সেটাকে যদি খুব আলতো ভাবে বলতে চাই তখনই মুলধ্বনি থেকে কিছুটা পরিবর্তন হয়ে যায়।
উদা: লক্ষ্মী-লোকখি ।
) দ্রুত উচ্চারণ এর জন্য:
      যারা খুব দ্রুত কথা বলে তাদের কোনো না কোনো সময়ে যেকোনো ধ্বনি বাদ পড়ে যায়,ফলে ধ্বনির পরিবর্তন খুব সহজেই হয়ে যায়।
উদা: যা ইচ্ছে তাই-যাচ্ছেতাই ।
) অনুভূতির প্রকাশের জন্য:
আমরা অনেক সময় ভালোবেসে,আদর করে বিভিন্ন অনুভূতি প্রকাশের সময় শব্দের মধ্যে কোনো ধ্বনিকে যোগ করে দিই আবার কোনো ধ্বনিকে বাদ দিয়ে দিই।এর ফলে ধ্বনির পরিবর্তন হয়।
উদা: ছোটো-ছোট্ট ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন